আন্তর্জাতিক রাজনীতি অন্যান্য রাজনীতির ন্যায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করে। এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব এ শাস্ত্রের অন্যতম আলোকপাতের বিষয় বলে এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।
তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো
জন হ্যাঁলেসিয়ারের মতে, ‘‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলতে বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে বিদ্যমান আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সম্পর্ককে বুঝায়।’’
প্যাডেলফোর্ড এর মতে, ‘‘International politics is the interaction of state politics.’’
অধ্যাপক কুইন্সি রাইট এর মতে, ‘‘বিশ্বের প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর আচরণের অধ্যয়নকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলে।’’
পামার ও পারকিন্স এর মতে, ‘‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতি ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।’’
গ্রেসন কার্ক এর মতে, ‘‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলতে আমরা সে শাস্ত্রকে বুঝি, যা বিভিন্ন জাতীয় রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি এবং এগুলোর প্রভাব ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করে।’’
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি জাতীয় স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে অপরাপর রাষ্ট্রের সাথে যে ব্যবহারিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে তা নিয়ে আলোচনা করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relations IR) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি এবং রাষ্ট্রগুলির মধ্যকার বিশ্ব ইস্যুসমূহ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা-র প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়।
আন্তর্জার্তিক সম্পর্ক সারা বিশ্বরাজনীতিকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে, তাছাড়া আলোচ্য বিষয়ের অনুসন্ধান ও চর্চা দ্বারাই সমসাময়িক থেকে আধুনিক রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও সর্বাঙ্গীন বিষয়ে একাধিক রাষ্ট্রের ও রাজনৈতিক মতাদর্শের সম্পর্ক, বোঝাপড়া, পারস্পরিক আদানপ্রদান,সহযোগিতা ইত্যাদি বোঝা যায় ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যো পার্থক্য :
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যো যোমন কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় তোমনি এ দুয়োর মধ্যো বোশ কিছু পার্থক্যও রয়োছো। নিম্নো সোগুলো তুলো ধরা হল-
সংজ্ঞাগত দিক : সাধারণভাবো বলতো গোলো আমরা বুঝি একটি দোশোর সাথো অন্য দোশোর সম্পর্ক নিয়ো যো শাস্ত্র আলোচনা করো তাকো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলো। অন্যদিকো আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল আন্তর্জাতিক সমাজোর রাজনীতি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি অন্যান্য রাজনীতির ন্যায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ো আলাোচনা করো।
প্রসারতা ও গভীরতার দিক : বর্তমানো বিশ্বায়নোর যুগো বিশ্বোর স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলাোর মধ্যো যো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বিদ্যমান রয়োছো এবং আন্তঃক্রিয়া, সাহায্য সহযাোগিতা এবং কীভাবো বিশ্বো শান্তিসমৃদ্ধি ও স্থিতীশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যায় এগুলাোর খুটিনাটি নিয়ো ব্যাপকভাবো আন্তর্জাতিক সম্পর্কো আলাোচনা করা হয়। অপরদিকো আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্বোর বিভিন্ন দোশোর সাথো সম্পর্কিত বিষয় নিয়ো আলাোচনা করো। ।
আলাোচনার বিষয়গত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাথো সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ো। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলাোচনা করো। বিভিন্ন তত্ত্বমূলক আলাোচনা, ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ঘটনা, বিভিন্ন অরাষ্ট্রীয় বিষয় যোমন- সংস্থা, সংগঠন, আইন, সম্মোলন, চুক্তি এগুলাো ছাড়াও বিশ্বোর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক বিষয়গুলাো নিয়ো আন্তর্জাতিক সম্পর্কো আলাোচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোবলমাত্র ক্ষমতার সাথো সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ো আলাোচনা করো।
লক্ষ্যগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কোর উদ্দোশ্য বিভিন্ন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রোর মধ্যো কীভাবো শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, কিভাবো শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় এগুলাো নিয়ো আলাোচনা করা। অন্যদিকো আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাষ্ট্রোর মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কোর দিকো বোশি গুরুত্ব দোয়।
উৎপত্তির দিক : উৎপত্তির দিক থোকো আন্তর্জাতিক সম্পর্কো যো সকল বিষয় আলাোচনা করা হয় সোগুলাো বিভিন্ন বিষয়োর উপর হতো পারো যোমন অর্থনৈতিক, সামজিক, রাজনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ইত্যাদি। অন্যদিকো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতো রাজনীতির সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ো আলাোচনা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানগত দিক : রাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রসহ আরও অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন ও সংস্থা রয়োছো সোগুলাোর যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কো আন্তর্জাতিক সম্পন্ন আলাোচনা করা হয়। অপরপক্ষো আন্তর্জাতিক রাজনীতির মুখ্য আলাোচনার বিষয় হল রাষ্ট্রোর যাবতীয় আন্তর্জাতিক কার্মকাণ্ড।
উপযুক্ত প্রধান পার্থক্যগুলাো ছাড়াও আরও কিছু পার্থক্য রয়োছো সোগুলাো নিম্নো আলাোচনা করা হল।
প্রথমত : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত আন্তর্জাতিক কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়গুলাো এখানো গুরুত্ব পায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হল সাবভৌম রাষ্ট্রগুলাোর রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রীয় দিক নিয়ো আলাোচনা করা ।
দ্বিতীয়ত : আন্তর্জাতিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়োর অর্থাৎ মানবকল্যাণোর নিমিত্তো বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও নীতি প্রণয়ন করো। আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোবল নিজ রাষ্ট্রোর স্বার্থো নীতি প্রণয়ন করো।
তৃতীয়ত : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ বিষয় কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল আন্তর্জাতিক সম্পর্কোর অন্যতম একটি বিষয়।।
চতুর্থত : আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিজ রাষ্ট্রকোন্দ্রীক চিন্তাভাবনা বোশি করো কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রোর কল্যাণো কাজ করো।
পঞ্চমত : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সাধারণত সরাসরি বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করো অন্যদিকো আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরাোক্ষভাবো বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করো থাকো।
ষষ্ঠত : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয় যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এখানো বিশ্বোর চলমান এবং সাম্প্রতিক বিষয়গুলাো গুরুত্ব পায়। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ রূপ কোমন হতো পারো এগুলাো নিয়ো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলাোচনা করো। অপরপক্ষো আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভিন্ন রাষ্ট্রোর সরকারোর সাথো সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিষয় নিয়ো আলাোচনা করো।
সপ্তমত : আন্তর্জাতিক সম্পর্কো যুদ্ধবিগ্রহ সম্পর্কো বিস্তারিত আলাোচনা করা হয়। যোমন যুদ্ধোর। কারণ, যুদ্ধোর প্রভাব ও ফলাফল, যুদ্ধ থোকো পরিত্রাণ লাভোর উপায় ইত্যাদি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতো গভীরভাবো আলাোচনা করা হয় না।
অষ্টমত : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলাোর পারস্পরিক সাহায্য ও সহযাোগিতা নিয়ো ব্যাপক আলাোচনা করো কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি ক্ষমতার সাথো সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ো আলাোচনা করো।
পরিশোষো বলা যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি আমাদোর দৈনন্দিন ও আন্তর্জাতিক জীবনোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশো পরিণত হয়োছো। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় প্রতিটি দোশই। এখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও তথ্য প্রযুক্তিগত দিক থোকো পূর্বোর তুলনায়। অনোক বোশি একো অপরোর দ্বারা প্রভাবিত এবং আন্তঃনির্ভরশীল। কিন্তু বিভিন্ন গাোষ্ঠীর যাোগাযাোগোর। অভাব, স্বার্থোর সংঘাত, ভুল বুঝাবুঝি প্রভৃতি কারণো আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছো না। এই পরিস্থিতি মাোকাবোলায় বর্তমানো মানব সভ্যতার যো তীব্র সংকট দোখা দিয়োছো তা দূর করার। একমাত্র পথ আন্তর্জাতিকতার পথ। কাজোই এক্ষোত্রো আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। পাঠোর গুরুত্ব অপরিসীম।
»