প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টিকেই হুমকি দিচ্ছেন। চাপ দিয়ে আইনপ্রণেতাদের নিজের পক্ষে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে পরাজয় না–মানা ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে একদিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করছেন একের পর এক, অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার বেপরোয়া চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ১৫ জনকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন সাবেক আইনপ্রণেতা। দুজন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একজন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সাবেক সহকারী। বিজ্ঞাপন
নিজের দীর্ঘ তালিকা থেকে অপরাধ ও দণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, সবদিক খোলা রাখছেন ট্রাম্প। ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে ক্ষমতায় আরও চার বছরের জন্য থেকে যাওয়ার কথাও ট্রাম্প চালু রাখছেন জোরালোভাবে।
গতকাল দেওয়া এক টুইট বার্তা ও ফেসবুক পোস্টে নিজের রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের ওপর চড়াও হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টিকে ভুলে গেলে চলবে না যে তাঁর সাহায্য ছাড়া সিনেটে দলের আটটি আসন কম হতো। মার্কিন সিনেটে এখন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার কৃতিত্ব তাঁর নিজের বলেই দাবি করছেন ট্রাম্প।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আছেন। এদিন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন। ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত ট্রাম্প সংবিধানের ক্ষমতাবলে যেকোনো অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন, দণ্ড মওকুফ করতে পারেন বা দণ্ড কমিয়ে আনতে পারেন। মার্কিন সংবিধান প্রেসিডেন্টকে এ ক্ষেত্রে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে।
সাধারণত এসব সাধারণ ক্ষমার তালিকা বিচার বিভাগের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্প কতজনকে ক্ষমা করেন, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। এমনকি নিজের জন্যও তিনি ক্ষমাপত্রে স্বাক্ষর করতে পারেন বলে একসময় বলেছেন। শেষ মুহূর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা প্রদান করে ট্রাম্প নিজের জন্য সাধারণ ক্ষমা গ্রহণের করতে পরেন, এমন কথাও বলা হচ্ছে।
২০ জানুয়ারির আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি এখন ৬ জানুয়ারির দিকে। ইলেক্টোরাল কলেজ থেকে প্রাপ্ত ভোট কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে গ্রহণ করার সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে এদিনটিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে এসব সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতায় কখনো বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি। এবারের পরিস্থিতি ট্রাম্পের কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে উঠেছে।
কংগ্রেসের যৌথ সভায় পদাধিকারবলে সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।বিজ্ঞাপন
ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গতকাল ফ্লোরিডায় রক্ষণশীল ছাত্র–যুব সংগঠকদের এক সমাবেশে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চলমান লড়াইয়ে সমর্থকদের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে শতাধিক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ইলেক্টোরাল ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আপত্তি উপস্থাপন করবেন। এমন আপত্তি উপস্থাপনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বসে তাঁর লোকজনকে নিয়ে একের পর এক সভা করছেন। বিভিন্ন রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে ট্রাম্প শিবির থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বেশ কিছু রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট নিয়ে কংগ্রেস ও সিনেট সদস্যদের আপত্তি জানানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। এমন আপত্তি জানানোর পর মাইক পেন্স আপত্তির ওপর ভোট গ্রহণের আহ্বান জানাতে পারেন। তখন রিপাবলিকান ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে হবে।
রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের কাছে ট্রাম্পই এখন মূল নেতা। রক্ষণশীল অন্ধ সমর্থকদের কাছে ট্রাম্পের ভিত্তি খুব শক্তিশালী। রিপাবলিকান পার্টির নেতারা ট্রাম্পের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে অনিচ্ছুক নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কারণেই।
ট্রাম্পের নির্বাচনপরবর্তী আচরণের সঙ্গে একমত নন, রিপাবলিকান এমন অনেক আইনপ্রণেতা কংগ্রেসে ভোটাভুটি হলে বিপাকে পড়বেন। দীর্ঘ বিতর্কের মাধ্যমে দিন গড়ানোর পর এ-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ নিয়েও ট্রাম্প শিবির থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রয়াস রয়েছে। ৬ জানুয়ারিতে কংগ্রেসে কোনো জট পাকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে থেমে যাবেন, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।
গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর ভোট জালিয়াতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অমূলক মামলাগুলো একের পর এক খারিজ হয়েছে। একইভাবে যেকোনো সাংবিধানিক বিরোধ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও আবার যেতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর এসব মামলাবাজি এবং কংগ্রেসে জট পাকানোর চাল সফল না হলেও তা ওয়াশিংটনকে সরগরম করে রেখেছে।
মার্কিন কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমও ধারণা করতে পারছে না কে এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলছে যে তিনি আরেক দফা হোয়াইট হাউসে থাকতে পারবেন। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের বরাত দিয়ে বলেছে, বাস্তবে ট্রাম্পের আশপাশে এমন একজনও নেই, যে বিশ্বাস করে ২০ জানুয়ারির পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে পারবেন।
»