ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হকের ওপর আবারো হামলা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। গতকাল বিকাল ৪টায় টিএসসি’র সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে এ হামলা হয়। এতে ডাকসুর সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত দশ নেতাকর্মী আহত হয়। প্রতিবেশী ভারতে নাগরিকত্ব আইন এনআরসি ও সিএবি এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সেদেশের পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ও আন্দোলনকারী সব শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ডাকসু ভিপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। কিন্তু সমাবেশ শুরুর আগ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এনআরসি ও সিএবি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে এ বিষয়ে সমাবেশ না করতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদকে নিষেধ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। এতে শিক্ষার্থীরা অস্বীকৃতি জানালে হামলা চালায় আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুনের নেতৃত্বাধীন অংশটি। এতে নুরুল হক নুর, আখতার হোসেনসহ দশ নেতাকর্মী আহত হন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চও দাঁতভাঙ্গ জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের নাগরিকত্ব আইন এনআরসি ও সিএবি এর প্রতিবাদে সেদেশে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে কংগ্রেসসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকাল ৪টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয় ভিপি নুরসহ নেতাকর্মীরা। একই সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে সংহতি সমাবেশে বাঁধা দেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরসহ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দাবি, কোনরকম কথাবার্তা ছাড়াই ‘বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না’ বলেই নুরের উপর হামলা চালান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা। হামলায় গুরুতর আহত হন আইন বিভাগের সিফাত নামে এক
শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে তারা ডাকসু ভিপি নুরুল হক, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসনসহ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেনসহ অন্যদের উপর হামলা চালায়। পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হামলা পরবর্তী এক সমাবেশে নুরুল হক নুর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে ‘র’ ও বিজেপির এজেন্ট বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ অকারণে তার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। হামলায় নিজের বাম হাতের একটি আঙুলে আঘাত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে এই আঘাত করা হয়েছে। নুর বলেন, আমরা দেশের স্বার্থবিরোধী আর কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেব না। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ এই স্বৈরাচার সরকার। হামলায় আহত আকতার হোসেন সমাবেশের সামনে বসে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভারতের আধিপত্য কায়েম হতে দেব না। সরকারের নীরব ভূমিকার জন্য দেশ আজ অন্যের হাতে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ডাকসু ভিপির কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা। তিনি কেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমরা তার কাছে জানতে চেয়েছি। বুলবুল বলেন, আমরা যদি র কিংবা বিজেপির এজেন্ট হই নুর পাকিস্তানের এজেন্ট। হামলার বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, রাজু ভাষ্কর্যে কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। হামলা কোনভাবেই সমর্থণযোগ্য নয়। এদিকে এনআরসি ও সিএবি এর বিরোধীতা করে ভারতে চলমান শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ডাকসু ভিপি নুরল হক নুর বলেন, অসাংবিধানিক এনআরসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও জাফরানি গুণ্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। গত রোববারের ওই ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ভারতের সর্বত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে আরও সংহত করতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার এমন ঘৃণ্য ও মানবতাবিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে চাইছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভারতের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছে।
»