চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। এর প্রতিবাদে এফডিসিতে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী ও তারকারা। আজ রোববার এফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনের প্রদর্শন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে এই সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ডিপজল, অঞ্জনা, রুবেলসহ আরও অনেকে। তাঁরা মনে করেন, শিল্পী সমিতি একটি পরিবার। এই পরিবারে মান–অভিমান হবে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা বাইরে প্রচার না করে নিজেদের মধ্যেই সমাধান করা শ্রেয়। নায়ক রুবেলের সঞ্চালনায় প্রথমেই বক্তব্য দেন অভিনেতা এবং শিল্পী সমিতির প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর। এ অভিনেতাও সবার মধ্যে এক হয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বর্তমান শিল্পী সমিতির করোনাকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। যেসব পরিচালক, প্রযোজক দুই নেতাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘শিল্পীরা চলচ্চিত্রের একটা অংশ। তাঁদের বাদ দিয়ে কখনো কোনো উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এখন যে দুর্যোগ চলছে, সেখানে শিল্পী, প্রযোজক, কলাকুশলী—অনেকেই খারাপ দিন পার করছেন। আপনাদের সবাইকে বলব, নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান। অনর্থক আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবেন না। ভুল মানুষেরই হয়। তাঁরা কোনো ভুল করলে আমরা সবাই বসে সমাধান করব। এটাই যৌক্তিক পথ।’
নিজের ও সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এই প্রতিবাদ সভা করতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতায় বলেন মিশা সওদাগর। কোনো একটি বিষয় নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি থাকার পরেও সবাইকে নিয়ে ঐক্য চান এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রকম দলাদলি, হিংস্রতা, বিদ্বেষ চাই না। আমরা চাই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। আমাদের শিল্পী সমিতির মূল কাজ শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। আমরা সবাইকে সম্মান করে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ একটাই, আমাকে বয়কট করা হলো। জায়েদের যদি কোনো অন্যায় থাকে, আমাদের লিখিত আকারে দিতেন। আমরা নিজেরা বসে সমস্যার সমাধান করতাম। কিন্তু এখন তা বড় আকার ধারণ করল। আমরা চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে শান্তি চাই। আমরা শিগগিরই ক্ষণিকের ভুলটাকে শুধরে নেব। যদি না হয়, তাহলে সাংগঠনিকভাবে আমরা সাত দিনের কর্মবিরতিতে যাব।
নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? তা সঠিকভাবে জানেন না জায়েদ খান। তেমন কোনো চিঠি বা লিখিত কিছুই তিনি পাননি। তিনি মনে করেন, তাঁকে বিপদে ফেলতেই বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মিথ্যা মামলার পাঁয়তারা করছেন অনেকে। তিনি বলেন, ‘আমি কী এমন করেছি, যে কারণে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। এখানে অন্য কাউকে নয়, আমাদের দুজনকে (মিশা–জায়েদ) ছোট করা হচ্ছে। শিল্পীকে কেউ এভাবে বয়কট করতে পারেন না। কেন চলচ্চিত্র অঙ্গনকে তাঁরা একটি সার্কাসে পরিণত করছেন। রাত নেই, দিন নেই আমি শিল্পী সমিতির সবার স্বার্থে কাজ করেছি। আমি সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। নিজেকে আমি নেতা ভাবি না, আমি সেবক। এরপরও কেন আমাকে বিপদে ফেলা হচ্ছে? আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলী, যাঁরা আমাদের অভিভাবক, তাঁদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে বলা যেত। নায়ক ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই, উজ্জ্বল ভাই, ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই, ডিপজল ভাই আছেন, তাঁদের বলতে পারতেন। দয়া করে আপনারা পেছন থেকে ষড়যন্ত্র না করে আসুন কীভাব সিনেমা বানানো যায়, সেই চিন্তা করি। আসুন, এক হয়ে কাজ করি।’
বিকেল পাঁচটা থেকে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয় এফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন নায়ক রুবেল।
»