ব্রেকিং নিউজ

অনাহারে ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু

অনাহারে মৃত্যু ৮৫ হাজার শিশুর

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হয়ে উঠেছে। দুর্ভিক্ষ গ্রাস করেছে সিংহভাগ এলাকা। তীব্র খাদ্য সঙ্কট। আশি লক্ষ মানুষ আপদকালীন খাদ্য সাহায্যের ভরসায় বেঁচে আছেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সংখ্যা অচিরেই এক কোটি আশি লক্ষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকে পৌঁছতে পারে। অনাহার, অপুষ্টিতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিশু। বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা কোটিতে পৌঁছে গেছে। কলেরার প্রকোপে জীবন বিপন্ন প্রায় ১১ লক্ষের।

যুদ্ধবিমানের চক্কর কাটার শব্দ শুনে ঘুমোতে যাওয়া। রাস্তায় বেরোলে গুলির শব্দ। ঘুম ভেঙে উঠে ধ্বংসের ছবি দেখা। ইয়েমেনের শিশুদের নিত্য দিন এমনই কাটে। গত চার বছরে যুদ্ধ, রক্তপাত, বোমার শব্দ রোজকার। ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেব বলছে, এই চার বছরে অনাহারে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮৫ হাজার শিশুর। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, অপুষ্টিতে বিপন্ন ১ কোটি ৪০ লক্ষ শৈশব। মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা। প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যুর আর্তনাদে ভারী হচ্ছে বাতাস।গত বছর ইয়েমেনের আসলাম শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে অপুষ্ট শিশুদের ছবি তুলেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফোটোগ্রাফার টায়লার হিকস।  সেই ছবিগুলো সামনে আনার পরে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় টায়লারের বিরুদ্ধে। মৃত্যুর যন্ত্রণাকে এত পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তোলার সাহস দেখানোর জন্য টায়লারের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। সেই ফোটোগ্রাফার বলেছিলেন, ইয়েমেনের যে কোনও শরণার্থী শিবির যেন নরক। মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুণছে প্রতিটি শিশু। রুগ্ন, বেঁকেচুরে যাওয়া সন্তানদের বুকে আঁকড়ে কান্না ভুলেছেন মায়েরা। চোখের সামনে অজস্র মৃত্যু দেখে ভেঙে পড়েছিলেন সেই চিত্রগ্রাহকও। 

বিশ্বের সব ধনী এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর মতোই সৌদি আরবও বহু দিন ধরেই তার দক্ষিণে অবস্থিত আরব বিশ্বের সব চেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেনের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত চার বছর ধরে অত্যাধুনিক বোমারু বিমানের হামলায় ইয়েমেনকে ছিন্নভিন্ন করেছে সৌদি আরব। একদিকে সৌদি ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াই, অন্যদিকে শিয়া, সুন্নি এবং ইহুদিদের তিক্ত জাতিগত দ্বন্দ্ব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। সংখ্যালঘু শিয়া জায়দিরা নব্বইয়ের দশকে ইয়েমেনের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যারাই পরবর্তীতে হুথি বিপ্লবী নামে পরিচিত হয়।

হুথি বিদ্রোহীদের দাবি তারা জাতিগত বঞ্চণা, দুর্নীতি, সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী চক্র ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। ২০০৪ সালে এই বিদ্রোহ বিরাট আকার ধারণ করে। ২০১১-র ‘আরব বসন্ত’র সময়ে ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট সালেহ ক্ষমতাচ্যুত হন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আবেদ রাব্বো মনসুর হাদি। কিন্তু তার ক’বছরের শাসনেই ইয়েমেন-এর শিয়ারা সরকারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগ তোলে।

২০১৪ সালে বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের তদানীন্তন রাজধানী দখল করে নিলে  সরকার ও হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করে সৌদি আরবের বিমানবাহিনী। সঙ্গে যোগ দেয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, কুয়েত, জর্ডান-এর মতো বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবাহিনীও। এই হামলায় হাজার হাজার সাধারণ ইয়েমেনি নাগরিক মারা যায়। ঘরহারা হন বহু মানুষ। জাতিসংঘ এবং যুদ্ধবিশেষজ্ঞদের মতে এই যুদ্ধেই মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়েছে। কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট তৈরি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষকে। সূত্র : দ্য ওয়াল।

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক প্রকাশনা সমূহ

   সাম্প্রতিক খবর



»